গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশ্যে রামদা, ছুরি, বল্লম, টেটাঁ ও আগ্নেয়াস্ত্র উচিঁয়ে কালাম বাহিনীর সদস্যরা চাদাঁর টাকা না পেয়ে কালীগঞ্জের পাড়াবর্তা এলাকার ব্যবসায়ী রুবেলকে ধাওয়া করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাকে বেদম প্রহার করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার লুটে নেয়। বাধা দিতে গেলে রুবেলের প্রতিবেশী ৩ জনকে কুপিয়ে ও ৪ জনকে পিটিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় মামলা করে ব্যবসায়ী রুবেল চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগচ্ছেন।
কালাম বাহিনীর সন্ত্রাসীদের ভয়ে পাড়াবর্তা গ্রামের ব্যবসায়ী আতাবুর, আরিফুল, লিটন, রুবেল, সেলিম, রেদোয়ানের পরিবার সহ ১০/১২ পরিবার এখন গ্রাম ছাড়া। কালামের অত্যাচারে শিশু ও মহিলারা থাকে আতংকে । তাদের বসত ঘরে ঝুলছে তালা। নিরাপত্তার অভাবে সেসকল পরিবারের কেউ কেউ এখন রূপগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পাড়াবর্তা গ্রামের আমান উল্লাহ সরকারের ছেলে কালাম সরকার ২০১৩ সালে তার নিজের নামে কালাম বাহিনী গড়ে তোলে। কালাম বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ২০/২৫ জন। কালামের রয়েছে ৬/৭ জন দেহরক্ষী। দেহরক্ষী সানাউল্লাহ, জনি, রায়হান, আলী হোসেন মাদক ব্যবসা ও জবরদখল নিয়ন্ত্রণ করেন। কালাম বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ১৭/১৮ টি রামদা, ৪/৫ টি ছুরি, টেটাঁ, বল্লম ও রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত মোহাম্মদ আলীর আগ্নেয়াস্ত্র। এসকল অস্ত্র নিয়ে কালাম বাহিনীর সক্রিয় সদস্যরা প্রায়ই মহড়া দিচ্ছে। তখন শিশু ও নারীরা আতংকিত হয়ে উঠে। কালাম বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, নারী নির্যাতন, জবরদখল, হামলা, ভাংচুরের ঘটনায় গাজীপুর আদালতে ও কালীগঞ্জ থানায় এক ডজনের বেশি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। কালীগঞ্জ থানা পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা কালামের বাড়িতে প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া করছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেয়া অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, প্রশাসনিক সহযোগিতার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে কালাম সরকার বিএনপি থেকে আওয়ামী পেশাজীবীলীগে যোগ দেন। এর পর থেকে কালাম বাহিনীর সদস্যরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কেউ সাহস পাচ্ছে না। প্রতিবাদ করলেই হামলা, ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকিসহ মিথ্যা মামলায় আসামি করা হচ্ছে। কখনও কখনও কালামের পৈত্রিক আমলের লাইসেন্সকৃত বন্দুক উচিঁয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনদের হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। কালীগঞ্জের পাড়াবর্তা, বড়কাউ, কেটুন, টেকপাড়া, আমারুল, গলান রূপগঞ্জের ধামছি, গুচ্ছগ্রাম,পিংলান, পলখান সহ আশপাশের ১৪/১৫ টি গ্রামে কালাম বাহিনীর সন্ত্রাসীরা দাপড়ে বেড়ায়। কালীগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেফতার অভিযান চালালে রূপগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে তারা আশ্রয় নেয়। আবার রূপগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালালে ওই সন্ত্রাসীরা কালীগঞ্জের শালবন এলাকায় নিরাপদে আশ্রয় নেয়। এক্ষেত্রে রূপগঞ্জ ও কালীগঞ্জ থানা পুলিশ একযোগে অভিযান চালানোর জন্য ভুক্তভোগীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছে।
কালাম বাহিনীর সন্ত্রাসী সেকান্দার আলী ও জামান সরকার সহ বেশ ক’জন সদস্য গ্রেফতার হলেও আইনের ফাকঁ ফোকরে কখনও কখনও কালীগঞ্জ থানা ভবন থেকেই তারা ফিরে আসে। পরে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
সরেজমিন গিয়ে ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, কেটুন গ্রামের বাছির উদ্দিনের ছেলে রিটন মিয়ার নির্মাণাধীন দোকানঘর জবরদখলে নেয়। কেটুন গ্রামের বিশ^নাথ বিসুর ঘরভিটা সহ জমি দখলে নেয়। কয়েকবার হামলা চালিয়ে তার বাড়ির লোকজনকে জখম করে। পাড়াবর্তা গ্রামের ইমান আলীর ছেলে শরিফ মিয়ার কাছ থেকে জোরপূর্বক সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে এখন ৬০ লক্ষ টাকা দাবি করছে। প্রতিবাদ করায় হামলা, প্রাণনাশ ও মামলায় আসামী করার হুমকি দিচ্ছেন। পাড়াবর্তা গ্রামের আরিফুল মিয়ার মৎস্য খামার লুটপাট করে জবরদখলে নিয়েছে কালাম ও তার বাহিনীর সদস্যরা। বড়কাউ গ্রামের ইমান আলীকে বেদম প্রহার করে। পাড়াবর্তা গ্রামের আতিক মিয়ার গরু চুরির ঘটনায় কালাম ও তার বাহিনীর সদস্যকে আসামি করে কালীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তা সাধারণ ডায়েরী হিসেবে রুজু করে। এসকল ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করলে মামলার বাদীদের ভয়ভীতি, প্রাণনাশ ও মিথ্যা মামলায় আসামি করার হুমকি প্রদান করছে ওই সন্ত্রাসীরা।
অভিযুক্ত কালাম বাহিনীর প্রধান কালাম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,তার কোনো বাহিনী নেই। ষড়যন্ত্র মূলকভাবে আমাকে বিভিন্ন মামলায় জড়ানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আলম চাদঁ বলেন, কালাম বাহিনী নামে সন্ত্রাসী বাহিনী আছে, সেটা আমার জানা নেই। তবে কোন সন্ত্রাসীকেই ছাড় দেয়া হবে না। সকল মামলার আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
রূপগঞ্জ থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, রূপগঞ্জে কোন সন্ত্রাসীর জায়গা হবে না। অপরাধীদের গ্রেফতারে প্রায়ই পুলিশের অভিযান চলছে। সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক বলেন, সন্ত্রাসীরা যে দলেরই হোক গ্রেফতার করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।